দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে নানা উদযোগ নেওয়ার পরও দুর্নীতি বেড়েই চলছে। দুর্নীতির কারণে সরকারের অনেক অর্জন আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতি কমছে না, উল্টো বেড়েই চলছে।
এবার ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব”। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দুদক কার্যালয়ে ঘুষ ও দুর্নীতি বিরোধী নানা শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার, প্লেকার্ড, পোস্টার এবং কাটুন প্রদশন করা হচ্ছে।
এবার কর্মসূচির শুরুতেই রয়েছে, সকাল সায়া ৮ টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় ও দুদকের নিজস্ব পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এ সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহ কর্মসূটি উদ্বোধন করবেন। এরপর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে সকাল ৯ টা থেকে সোয়া ৯ টা পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, দুদকের কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হুক, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মল হক খান, সচিব মো. মাহবুব হোসেন, দুদক মহা পরিচালক, পরিচালক, উপ পরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপ সহকারী পরিচালকবৃন্দসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারীগণ, গণমাধ্য কর্মীরা, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারী, আইনজীবী, স্কাউটস, বিএনসিসি, গার্লস গাইড এবং বিভিন্ন এনজিওএর প্রতিনিধিদেরও অংশ গ্রহণের কথা রয়েছে।
দুদকের কর্মসূচিতে আরও রয়েছে, শুক্রবার সকাল ১০ টায় আন্ত—র্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভা এবং দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদানের আয়োজন করা হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈন উদ্দীন আবদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদের বাণীবদ্ধ রেকর্ড করা বক্তব্য উপস্থাপন করা হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এরআগে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন, দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, আরো বক্তব্য রাখবেন, দুদকের কমিশনার (তদন্ত) ড. মো. জহুরুল হুক, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মল হক খান। একই সাথে দুদকের গৃহিত কর্মসূচি জেলা ও উপ জেলা পর্যায়ে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছর ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবসে আয়োজিত আলোচনা সভায় দুদকের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও খেষতমজুরা দুর্নীতি করে না। দেশের শিক্ষিত লোকদের মধ্যে ৫ শতাংশ মানুষ ঘুষ খায় ও দুর্নীতি করে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
ওই অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান দুর্নীতিবাজদের প্রতিরোধে দুদকের হাতকে শক্তিশালী করতে দেশের সুশিল সমাজকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছিলেন। দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেছিলেন,‘ দেশে দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তারা প্রতিষ্ঠিত ও ক্ষমতাবান। প্রতিটি সেক্টরেই ঘুষ- দুর্নীতি বেড়েছে। নানাভাবে দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করা হয়। জনগণকে সচেতন ও গণজাগরণের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ করার দঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি’।
গত বছর ৯ ডিসেম্বর দুদকের আয়োজিত অনুষ্ঠানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের রেকর্ড করা ভিডিও বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, ‘বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় কখনো দুর্নীতির সাথে আপস করেননি। রাষ্ট্রপতির ভাষণে বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ১৯৭৩ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু জয়পুরহাটে এক সমাবেশে বলেছিলেন, ‘সৎভাবে কাজ করতে হবে। গরিবের অর্থ কেউ যেন আত্মসাৎ করে না খায়। দুর্নীতি বাংলার মাটি থেকে মুছে দিতে হবে’। ‘মানুষের চাহিদার সীমা থাকে, কিন্তু লোভ সীমাহীন। দুর্নীতি এমন একটি বিষয় যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত আছে। পৃথিবীর কোনো দেশই এর কুপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। সামাজিকভাবে দুর্নীতি বিরোধী মনোভাব জাগ্রত না হলে, কেবল দুর্নীতি দমন কমিশনের একার পক্ষে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়’। # কাশেম