দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
বীমা উনয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনকে আগামী ২১ কার্যদিবসে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১ জুন) দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের স্বাক্ষরে পাঠানো নোটিশে দুদক আইন ২০০৪ সালের ২৬ (১) ধারায় আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে।
নোটিশে নির্ধারিত সময়ে এবং পাঠানো ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় নোটিশ প্রাপকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গণমাধ্যমকে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পরই এবার তার কাছে সম্পদ বিবরণী চেয়ে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
দুদকের নোটিশটি আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেনের রাজধানীর মিরপুরে শেওড়াপাড়ার বর্তমান বাসার ঠিকানায়ও পাঠানো হয়েছে। নোটিশে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে দুদকের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে, ‘আপনি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত স্বনামে- বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ/সম্পত্তির মালিক হয়েছেন’।
আপনার নিজ ও আপনার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে বেনামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, দায়- দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণী কমিশনে দাখিল করবেন। এ আদেশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত ছকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে ব্যর্থ হলে কিংবা মিথ্যা সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারা মোতাবেক আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্র মতে, আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা ঘুষ দাবির অভিযোগে ২০২১ সালের ৪ মার্চ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দুদক উপ-পরিচালক নুরুল হুদাকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনুসন্ধান পর্যায়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যানকে তলবও করা হয়েছিল। ২০২১ সালে ৭ ফেব্রæয়ারি গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছিল বলে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
পরে ১৭ ফেব্রæয়ারি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ অসত্য ও বানোয়াট দাবি করে দুদকের কাছে প্রত্যাহারের আবেদন জানায় ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
তবে ঘুষের অভিযোগ কেন করা হয়েছিল, আবার তা কেন প্রত্যাহার চাওয়া হলো, এ প্রশ্ন সামনে রেখে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি তৎকালীন দুদক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, দুদক আইনে অভিযোগ প্রত্যাহারের সুযোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে অভিযোগ যদি সুস্পষ্ট থাকে তাহলে তদন্ত শুরু হবে।
এক্ষেত্রে প্রত্যাহারের আবেদন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যাবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা খতিয়ে দেখবেন, কেন অভিযোগ করা হয়েছিল, আবার কী কারণে তা প্রত্যাহার চাওয়া হলো।
এর আগে ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির পর্ষদ কমিটির সভা থেকে প্রতিষ্ঠানটির জয়েন্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পল্লব ভৌমিককে অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল। আবার তার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতেই অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলা হয়।
ডেল্টা লাইফের তৎকালীন প্রশাসক সুলতানুল আবেদীন মোল্লা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি পর্ষদ সভায় বিবিধ এজেন্ডার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার উৎকোচ (ঘুষ) দাবির অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার জন্য দুদক চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দাখিলের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছিল।
বিভ্রান্ত হয়ে আপনি (পল্লব ভৌমিক) তা দাখিল করেছিলেন। এখন আপনার দাখিল করা অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য এ সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত ৭ ফেব্রæয়ারির সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগে বলা হয়, আইডিআরএ চেয়ারম্যান প্রথমে দুই কোটি টাকা, পরে এক কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ৫০ লাখ টাকা ‘উৎকোচ’ দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ঘুষের তথ্য তুলে ধরায় প্রতারণার অভিযোগ তুলে ২০০ ধারায় ডেল্টা লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১৭ জানুয়ারি মামলা করেছে আইডিআরএ। #