দূরবীণ নিউজ প্রতিনিধি :
দি ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমান পদ্মা ব্যাংক) সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীসহ, ১১ জনের বিরুদ্ধে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতি,প্রতারণা, স্বজনপ্রীতি, পরস্পর যোগসাজশ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যেমে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার অপর আসামীরা হলেন; দি ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. আতহার উদ্দিন, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী মোস্তাক আহম্মদ, সাবেক এসভিপি শওকত ওসমান চৌধুরী, খাতুনগঞ্জ শাখার সাবেক এসইও অ্যান্ড ম্যানেজার অপারেশন মো. আনোয়ার হোসেন, ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক মো. আবু আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আজাদ, সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে এমডি) ফয়সাল আহসান চৌধুরী ও সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শামীম, এস বি অটো ব্রিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটিডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. ছগীর চৌধুরী, ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. মাজেদুল ইসলাম।
সোমবার (২৯ আগস্ট) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হক। হণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আরিফ সাদেক। তিনি বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪(২) ধারায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।
দুদকের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ গ্রহীতার বন্ধকী সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু কম জানা সত্তে¡ও আগের ১৪ কোটি টাকা ঋণের পর আরো ১০ কোটি টাকা ৩ মাস মেয়াদি টাইম ঋণ দিয়েছেন। এই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ছগীর চৌধুরী ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালক আবু আলম ও তার স্ত্রী পারভীন আক্তারের সহায়তায় তাদের হিসাবে স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে ও নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। এই অর্থ পরস্পরের যোগসাজশে আত্মসাৎ করা হয়।
মামলায় উল্লেখ রয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত চট্টগ্রামের স্পেশাল মামলা নং- ১০/২০১৯ এর অনুসন্ধানকালে দুদক কর্মকর্তারা জানাতে পারেন, এস বি অটো ব্রিকসের এমডি মো. ছগীর চৌধুরীর দুটি ঋণের বিপরীতে চট্টগ্রামের পটিয়া খাশিয়াইস মৌজায় অবস্থিত ১৯৯ দশমিক ৪০ শতক জমি রেজিস্টার্ড মর্টগেজা দলিল নং- ৪০৫৬ মূলে বন্ধকীকরণ করা হয়। ব্যাংকের শাখা কর্তৃক নিযুক্ত তৃতীয় পক্ষ ন্যাশনাল সার্ভে বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত মূল্যায়ন প্রতিবেদন মোতাবেক মর্টগেজকৃত সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু ২৩ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা হলেও ঋণ গ্রহীতাকে সর্বমোট ২৪ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়।
২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই ১৯৯ দশমিক ৪ শতাংশ জমির মার্কেট ভ্যালু নির্ধারিত করে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ফোর্সড সেল ভেল্যু নির্ধারিত হয় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ গ্রহীতার বন্ধকীকৃত সম্পত্তির ফোর্সড সেল ভেল্যু কম জানা সত্তে¡ও তাকে আগে দেওয়া ১৪ কোটি টাকা ঋণের অতিরিক্ত ১০ কোটি টাকা টাইম ঋণ দিয়েছেন।
ওই টাইম ঋণের ১০ কোটি টাকা এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাবে ৫ কোটি টাকা করে দুই বারে ১০ কোটি টাকা বিতরণ করেছেন। এই টাকা আত্মসাতের অপচেষ্টা হিসেবে ২০১৫ সালের ২২ ও ২৩ জুন এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাব নং ০১৭৩৫০০০৬০৯০৭ থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলমের স্ত্রী পারভীন আক্তারের এসএনডি হিসাবে জমা করা হয়। পরে ওই সমপরিমাণ টাকা পুনরায় এস বি অটো ব্রিকসের হিসাবে ফেরত আনা হয়। ওই লেনদেনের কোনো ভাউচার পাওয়া যায়নি।
২০১৫ সালের ২২ জুন এস বি অটো ব্রিকসের টাইম ঋণ হিসাব নং ৭৩৫০০০৬০৯০৭ থেকে ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে এস বি অটো ব্রিকসেরই চলতি হিসাব ০১১১১০০০৪৩৩০১ তে ৫ কোটি টাকা জমা করা হয়। ওই হিসাব থেকে এস বি অটো ব্রিকসের মালিক মো. ছগীর চৌধুরী কর্তৃক ব্যাংকের তৎকালীন পরিচালক আবু আলমের স্বত্বাধিকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের নামে দেওয়া ক্যাশ চেক। ওইদিন ১ কোটি টাকা করে পাঁচটি চেকে পাঁচ কোটি উত্তোলন করে। মেসার্স আলম এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তা মো. জাফর প্রতিটি এক কোটি টাকা করে পাঁচটি চেকের পাঁচ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। #