দূরবীণ নিউজ প্রতিবেদক :
সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ সংসদ সদস্যের একাংশের স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা ও অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের মাধ্যম । ফলে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ৯ দফা সুপারিশ রেখেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার ( ১২ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই ৯ দফা সুপারিশ রেখেছে। টিআইবির বক্তব্য হলো; সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দে গৃহীত পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে কার্যকর তদারকি, সার্বিক মূল্যায়ন এবং সংসদ সদস্যের সততা ও স্বার্থের দ্বন্দ্ব সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট আচরণ বিধির, ঘাটতি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণকে আরও উৎসাহিত করছে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে।
এছাড়া সংসদ সদস্যের একাংশের জন্য এসব প্রকল্প স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চা, নির্বাচনে ভোট নিশ্চিত করার চেষ্টা ও অনৈতিকভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ‘সংসদীয় আসনভিত্তিক থোক বরাদ্দ: অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আউটরিচ ও কমিউনিকেশন বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংসদীয় আসনে থোক বরাদ্দের আওতায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের স্কিমসমূহের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনা করাই এ গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। এর আওতায় প্রকল্পসমূহের আইনি ও পদ্ধতিগত কাঠামো; স্কিম পরিকল্পনায় এলাকার চাহিদা নিরূপণ ও স্কিমের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে জনগণের অংশগ্রহণ পর্যলোচনা; স্কিমসমূহের বাস্তবায়ন এবং পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা; স্কিম বাস্তবায়নে দুর্নীতি হলে তার ধরন ও মাত্রা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা পর্যালোচনা ইত্যাদির প্রেক্ষিতে প্রকল্পের কার্যকরতা বৃদ্ধিতে ও বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সুপারিশ প্রস্তাব করা।
২০১৯ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ এবং ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এই গবেষণার সকল তথ্য ও ফলাফল গবেষণা সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। এই গবেষণায় সুশাসনের নির্দেশকের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ এবং শুদ্ধাচার চর্চার আওতায় বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে সংসদ সদস্যদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে সর্বপ্রথম ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সরকার ও বিরোধী উভয় দলের সংসদ সদস্যদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রত্যেক সদস্যের অনুকূলে দুই কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।
পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে আসনপ্রতি এই থোক বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, আইআরআইডিপি ১ (২০১০ থেকে ২০১৫) প্রকল্পে সংসদীয় আসন প্রতি ৩ কোটি টাকা করে পাঁচ বছরে ১৫ কোটি টাকা এবং আইআরআইডিপি ২ (২০১৫ থেকে ২০২০) প্রকল্পে আসন প্রতি ৫ কোটি টাকা করে চার বছরে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সংরক্ষিত আসনের ৫০ জন নারী সদস্য এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত নন।
দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ চলাকালীন (২০২১ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি) জুন ২০২০ সালে তৃতীয় পর্যায়ে আইআরডিপি ৩ প্রস্তাব একনেকে উত্থাপন ও অনুমোদন করা হয়েছে। এই থোক বরাদ্দের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর অধীনে প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা ও নির্দেশিকা না থাকলেও বিগত দুইটি সংসদে এই বরাদ্দ সরাসরি অনুমোদনের মাধ্যমে এটি একটি চর্চায় পরিণত হয়েছে।
ফলে স্কিম নির্বাচন প্রক্রিয়া, এলাকার চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ বন্টনের পূর্বশর্ত নির্ধারণ, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রক্রিয়ায় কার্যকরতার ঘাটতি লক্ষণীয়। সর্বোপরি, সংসদ সদস্যের জন্য আচরণ বিধি ও সদস্য থাকাকালীন তাদের সম্পদসহ কর্মকান্ডের বিবরণ প্রকাশের আইনি বা পদ্ধতিগত ব্যবস্থা না থাকায় জনগণের কাছে তাদেরকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
গবেষণায় দেখা যায়, সংসদীয় আসন প্রতি থোক বরাদ্দের আওতাভুক্ত পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য- গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ এবং গ্রোথ সেন্টার ও হাটবাজার উন্নয়ন; কৃষি ও অকৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান ও এসব পণ্যের বিপণন সুবিধা বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান ত্বরান্বিত করা।
অথচ বাস্তবায়িত প্রকল্পের প্রস্তাবনায় গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ এবং গ্রোথ সেন্টার ও হাটবাজার উন্নয়ন সম্পর্কিত স্কিম থাকলেও অন্যান্য লক্ষ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত কোনো ধরনের স্কিম পাওয়া যায় নি। এই গবেষণায় পদ্ধতিগত দৈবচয়নের মাধ্যমে ৫০টি সংসদীয় আসনের থেকে আইআরআইডিপি- ১ এর ৪৬৪টি স্কিম এবং আইআরআইডিপি- ২ এর ১৬৪টি স্কিম অর্থাৎ মোট ৬২৮টি স্কিম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া মোট ৩৪১ জন মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার এবং মোট ১৮০টি দলীয় আলোচনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, সার্বিকভাবে ৩২ শতাংশ স্কিম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন না হয়ে অতিরিক্ত এক বছর সময় লেগেছে। সার্বিকভাবে ৭৬.২ শতাংশ স্কিমে কাজ চলাকালীন তদারকি হয়েছে। প্রতিবেদনে ‘কাজের মান সন্তোষজনক’ উল্লেখ করা হলেও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত স্কিম পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বাস্তবে শতকরা ৪১.৮ শতাংশ কাজের মান ভাল, ২৮.৬ শতাংশ কাজের মান মোটামুটি আর ২৯.৬ শতাংশ কাজের মান ভাল নয়।
এছাড়া এই প্রকল্পে সার্বিকভাবে ১৪.৫ শতাংশ স্কিম সংস্কার করা হয়েছে। যে সকল স্কিম এখনও সংস্কার হয় নি সেখানে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (৪২.২ শতাংশ) স্কিমের অবস্থা ভাল নয়, সংস্কার প্রয়োজন। উল্লেখ্য, আইআরআইডিপি ২-এর স্কিমগুলো অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (১৭.৪%) স্কিমের অবস্থা ভাল নয়, সংস্কার প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা যায়, কোনো কোনো এলাকায় সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের কাছে বছরে ২০-২৫% কাজ বিক্রি (অবৈধভাবে সাব-কন্ট্রাক্ট) হয় কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক নথিতে সাব-কন্ট্রাক্টের কোনো প্রমাণ রাখা হয় না। তদারকি প্রতিষ্ঠানও এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন।
এছাড়া স্বজনপ্রীতি, ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন বা লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং ঠিকাদারদের মাধ্যমে ভোটের সময় ও ক্ষমতাসীন থাকাকালীন এলাকার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার ফলে সংসদ সদস্যের একাংশ কর্তৃক তদারকির ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় অংশীজনদের পারস্পরিক সুবিধা সমঝোতায় আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ঠিকাদার নিম্ন মানের কাজ করে লাভবান হন।
আরও দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ে স্কিম বাস্তবায়নকালীন কাজের মান সম্পর্কে অভিযোগ থাকলেও ৭৭.৬ শতাংশ ক্ষেত্রে হুমকি ও হয়রানির ভয়ে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় নি। তবে যে সকল ক্ষেত্রে অভিযোগ জানানো হয়েছে তার ভিত্তিতে ৭৬.১ শতাংশ স্কিমের ক্ষেত্রে কাজের মানের কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায় নি।
গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নমুনায়িত ৫০টি নির্বাচনী আসনে সার্বিকভাবে ৩৪ শতাংশ স্কিমের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে চাহিদা/মতামত নেওয়া হয়েছে। এই ৫০টির মধ্যে ২৯টি নির্বাচনী আসনের মোট স্কিমের ২৮.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য এলাকা পরিদর্শনের সময়ে সরাসরি এলাকাবাসীর চাহিদা/ মতামত নিয়েছেন।
উপকারভোগীদের মতে স্কিমেসমূহ উপযোগী বিবেচিত হলেও এলাকার প্রভাবশালী/ দলীয় ব্যক্তিদের বিশেষ অনুরোধ, সংসদ সদস্য বা তাদের আত্মীয়দের বাড়ি সংলগ্ন উপজেলা/ ইউনিয়নের গুরুত্ব বিবেচনা ইত্যাদি কারণে ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও কিছু স্কিমের তালিকাভুক্তি হয়েছে।
গবেষণায় দুর্নীতির তথ্যে দেখা যায়, স্কিমের কার্যাদেশ পাওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিল ও জামানতের টাকা উত্তোলন পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন অংশীজনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে (কখনো কখনো এককালীন) নিয়ম-বহির্ভূত কমিশন আদায় করা হয়। মোট ৬২৮টি স্কিমের প্রকৃত বিলের পরিমাণের প্রেক্ষিতে নিরীক্ষাকালীন কমিশন ছাড়াই আর্থিক দুর্নীতির প্রাক্কলিত মূল্য স্কিম প্রতি সর্বনিম্ন ৪,৩৩,২৩৭ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬,৬৪,৬০৩ টাকা এবং ৬২৮টি স্কিমে মোট প্রাক্কলন মূল্য সর্বনিম্ন ২৭,২০,৭৩,০৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪১,৭৩,৭০,৮৩৩ টাকা।
এছাড়া গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ৮৬% আসনে সরাসরি দলীয় তহবিলে (এককালীন) অথবা সংসদ সদস্যের একাংশ কর্তৃক ব্যক্তিগতভাবে সহকারীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে (১% – ২%) ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। আইনি প্রতিবন্ধকতা, মিথ্যা মামলার ভয় ও হয়রানির আশংকায় অনিয়মের তথ্য প্রকাশের উদ্যোগ ও আগ্রহের ঘাটতিসহ প্রতিবাদ এবং অভিযোগ না করার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংসদ সদস্যগণের মূল দায়িত্ব হলো আইন প্রণয়ন করা, জনগণের হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। যদি সংসদ সদস্যগন সরকারি ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদিসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হন তাহলে তাদের যে মূল দায়িত্ব- সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, তা সম্ভব হয় না।
বিশেষ করে, সরকারি তথা জনগণের অর্থে পরিচালিত ঠিকাদারি, ব্যবসা, সরবরাহ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি যুক্ত হলে স্বার্থের দ্বন্দ সৃষ্টি হয় এবং তার ফলে সরকারি কাজ এবং উন্নয়ন প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হয়। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার সম্ভাবনা ব্যহত হয়। তিনি বলেন, “পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নের নামে উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে রাজনীতি একাকার করা হয়েছে; দুর্নীতির অবারিত বিকাশ হয়েছে।”
ড. জামান বলেন, সংসদ সদস্যগণ যেহেতু এরপরও এটি তাদের এখতিয়ার হিসেবে নিয়ে নিয়েছেন, তাই তাদের একাংশ যেমন এই থোক বরাদ্দের প্রকল্পসমূহকে নিজেদের অধিকার মনে করেন, এর মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে নিজেদের প্রভাব বলয় বৃদ্ধি, স্থানীয় নেতাকর্মীদের যোগসাজশের দুর্নীতির সুরক্ষা এবং নিজেদের সম্পদ বিকাশের উপায় হিসেবে ব্যবহার করছেন; অন্যদিকে তেমনি এর ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়নে সাধারণ জনগণেরও তাদের এই ভূমিকা সম্পর্কে একধরণের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এ ধরণের স্বার্থের দ্বন্দ নিরসনমূলক সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা এবং জনপ্রতিনিধিদের জন্য কঠোর শুদ্ধাচার ও নৈতিক আচরণ প্রণয়ন করতে হবে এবং কঠোরভাবে এর বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলেই এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব।”
এই গবেষণায় প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে টিআইবির পক্ষ থেকে ৯ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: পরবর্তী প্রকল্প পরিকল্পনায় ব্যবহারের লক্ষ্যে সংসদীয় আসনে থোক বরাদ্দে ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পৃথকভাবে, নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করতে হবে এবং এগুলোর দুর্বলতা চিহ্নিত করে কার্যকরতা বৃদ্ধির সুযোগসমূহের বিস্তারিত বিবরণ তৈরি করতে হবে।
এ প্রকল্পের আইনি কাঠামো বা নীতিমালা সুনির্দিষ্ট করতে হবে; প্রকল্পের অধীনে স্কিম পরিকল্পনা ও তালিকাভুক্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট আসনের ভৌগোলিক অবস্থান এবং উপযোগিতা অনুযায়ী তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট সমন্বয় কমিটিতে স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধিসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব হ্রাস করতে হবে; স্কিম এলাকায় কাজ চলাকালীন সম্পূর্ণ প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণসহ তথ্যবোর্ড স্থাপন করতে হবে।
এই প্রকল্পের সব ধরনের তথ্য একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে; কৃষি ও অকৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদানসহ বিপণন সুবিধা বৃদ্ধি ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে এমন স্কিম পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে; জনপ্রতিনিধিদের রাজনৈতিক শুদ্ধাচার চর্চার এবং দুর্নীতির প্রবণতা ও সুযোগ কমিয়ে আনতে কার্যকর জবাবদিহি ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। # প্রেস বিজ্ঞপ্তি ।